ঢাকা ০১:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
শিবগঞ্জ সীমান্তে ৬টি ভারতীয় চোরাই মোবাইলসহ আটক ১ রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম কায়েম না হলে পরিপূর্ণ দ্বীন মানা সম্ভবত নয়, মাও: বোরহান উদ্দিন নির্বাচন-গণভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করলেন সিইসি বরুড়ায় হানাদারমুক্ত দিবস পালিত ১২ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আবেদন ট্রাইব্যুনালে অবৈধ আয়ে পরিচালিত রাজনীতি চাঁদাবাজিকে উৎসাহিত করে : পরিকল্পনা উপদেষ্টা জাপান–বাংলাদেশ সহযোগিতায় কার্বন বাজার প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে: পরিবেশ উপদেষ্টা আইএসইউর মানবিক উদ্যোগ: বরুড়ায় শীতবস্ত্র বিতরণ  নারায়নগঞ্জের ফতুল্লার ধর্মগঞ্জে বেগম জিয়ার রোগ মুক্তি ও সুস্থতা কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল সেইভ আওয়ার উইমেন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম ডিভিশনের শীতবস্ত্র বিতরণ

জাপান–বাংলাদেশ সহযোগিতায় কার্বন বাজার প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে: পরিবেশ উপদেষ্টা

  • প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:৪১:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবেশ সুরক্ষায় সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও জাপান শিগগিরই একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) সইরের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

রোববার (৭ ডিসেম্বর) পরিবেশ অধিদপ্তরে আয়োজিত ‘যৌথ ঋণ স্বীকৃতি ব্যবস্থা ও অনুচ্ছেদ ৬ বাস্তবায়ন সহযোগিতা’ শীর্ষক কর্মশালার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তর এবং জাপানের পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

কপ৩০-এ বাংলাদেশের জাতীয় কার্বন বাজার কাঠামোর প্রাক-ঘোষণা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী মহলে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা। প্রশমন–কেন্দ্রিক প্রকল্প অনুমোদনের জন্য যে কাঠামোবদ্ধ প্রক্রিয়া তৈরি হয়েছে, তা ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ প্রবাহ নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি জানান। তবে চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে স্থানীয় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মতামত নিশ্চিত করাকে তিনি অপরিহার্য বলে অভিহিত করেন।

বাংলাদেশের হালনাগাদ জাতীয় নির্গমন হ্রাস পরিকল্পনায় ২০৩৫ সালের মধ্যে ৬.৩৯ শতাংশ শর্তহীন এবং ১৩.৯২ শতাংশ শর্তাধীন নির্গমন কমানোর প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, ঘোষণা দিলেই দায়িত্ব শেষ নয়; এখন দরকার স্পষ্ট বাস্তবায়ন রোডম্যাপ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে খাতভিত্তিক পরিকল্পনা দ্রুত চূড়ান্ত করার নির্দেশও দেন তিনি।

তিনি সতর্ক করেন, পূর্ণাঙ্গ অভিযোজন অর্থায়ন এলেও উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষা করা কঠিন হবে, যদি নির্গমন কমানোর পদক্ষেপ জোরদার না হয়। দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিস্থাপকতা তৈরির একমাত্র পথ হলো প্রশমনকে অগ্রাধিকার দেওয়া।

রপ্তানিমুখী শিল্পখাতের প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের পরিবেশবান্ধব মানদণ্ড পূরণ করতে গিয়ে এ ক্ষেত্রই সবচেয়ে দ্রুত টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তিনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রচলিত বৃক্ষরোপণ–কেন্দ্রিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির বাইরে গিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি, টেকসই কৃষি এবং প্রকৃতিনির্ভর সমাধানে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান।

বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বিষয়ে তিনি বলেন, উন্নত প্রযুক্তি, স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষণ, কঠোর পরিবেশগত মান, নিরাপদ স্থান নির্বাচন এবং নিয়মিত তথ্য প্রকাশ সবকিছু নিশ্চিত না হলে এসব প্রকল্প ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

আন্তর্জাতিক জলবায়ু আলোচনার দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ আর অপেক্ষা করতে পারে না। উন্নত দেশগুলোর সীমিত সহায়তা অভিযোজন ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে জাপানকে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের নির্ভরযোগ্য সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ ও জাপান পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রমে যৌথ সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত অংশীদারত্বের নতুন অধ্যায় হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন— পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান, জাপানের পক্ষ থেকে কার্বন সহযোগিতা কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেইতারো তসুজি, গবেষণা সংস্থা আইজেসের প্রতিনিধি কোয়াকুতসু, বাংলাদেশ–জাপান জলবায়ু ব্যবসা পরিষদের মহাসচিব মারিয়া হাওলাদার এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (জলবায়ু পরিবর্তন) মির্জা শওকত আলী।

কর্মশালায় সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, বেসরকারি খাতের নেতৃত্ব এবং জাপানি কোম্পানির প্রতিনিধিরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সবুজ প্রযুক্তি, জ্বালানি সাশ্রয় বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় করেন।

অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান এবং জাপানের প্রতিনিধিরা যৌথভাবে ‘অনুচ্ছেদ ৬ বিষয়ক বেসরকারি খাতের নির্দেশিকা’ প্রকাশ করেন। গবেষণা সংস্থা আইজেসের সহায়তায় প্রস্তুত এই নির্দেশিকা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিনিয়োগযোগ্য প্রশমন প্রকল্প চিহ্নিত করা, বিদেশি অংশীদার বেছে নেওয়া এবং ভবিষ্যৎ কার্বন বাজারে অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবে।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

শিবগঞ্জ সীমান্তে ৬টি ভারতীয় চোরাই মোবাইলসহ আটক ১

জাপান–বাংলাদেশ সহযোগিতায় কার্বন বাজার প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে: পরিবেশ উপদেষ্টা

আপডেট সময় : ০৪:৪১:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবেশ সুরক্ষায় সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও জাপান শিগগিরই একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) সইরের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

রোববার (৭ ডিসেম্বর) পরিবেশ অধিদপ্তরে আয়োজিত ‘যৌথ ঋণ স্বীকৃতি ব্যবস্থা ও অনুচ্ছেদ ৬ বাস্তবায়ন সহযোগিতা’ শীর্ষক কর্মশালার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তর এবং জাপানের পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

কপ৩০-এ বাংলাদেশের জাতীয় কার্বন বাজার কাঠামোর প্রাক-ঘোষণা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী মহলে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা। প্রশমন–কেন্দ্রিক প্রকল্প অনুমোদনের জন্য যে কাঠামোবদ্ধ প্রক্রিয়া তৈরি হয়েছে, তা ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ প্রবাহ নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি জানান। তবে চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে স্থানীয় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মতামত নিশ্চিত করাকে তিনি অপরিহার্য বলে অভিহিত করেন।

বাংলাদেশের হালনাগাদ জাতীয় নির্গমন হ্রাস পরিকল্পনায় ২০৩৫ সালের মধ্যে ৬.৩৯ শতাংশ শর্তহীন এবং ১৩.৯২ শতাংশ শর্তাধীন নির্গমন কমানোর প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, ঘোষণা দিলেই দায়িত্ব শেষ নয়; এখন দরকার স্পষ্ট বাস্তবায়ন রোডম্যাপ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে খাতভিত্তিক পরিকল্পনা দ্রুত চূড়ান্ত করার নির্দেশও দেন তিনি।

তিনি সতর্ক করেন, পূর্ণাঙ্গ অভিযোজন অর্থায়ন এলেও উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষা করা কঠিন হবে, যদি নির্গমন কমানোর পদক্ষেপ জোরদার না হয়। দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিস্থাপকতা তৈরির একমাত্র পথ হলো প্রশমনকে অগ্রাধিকার দেওয়া।

রপ্তানিমুখী শিল্পখাতের প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের পরিবেশবান্ধব মানদণ্ড পূরণ করতে গিয়ে এ ক্ষেত্রই সবচেয়ে দ্রুত টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তিনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রচলিত বৃক্ষরোপণ–কেন্দ্রিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির বাইরে গিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি, টেকসই কৃষি এবং প্রকৃতিনির্ভর সমাধানে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান।

বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বিষয়ে তিনি বলেন, উন্নত প্রযুক্তি, স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষণ, কঠোর পরিবেশগত মান, নিরাপদ স্থান নির্বাচন এবং নিয়মিত তথ্য প্রকাশ সবকিছু নিশ্চিত না হলে এসব প্রকল্প ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

আন্তর্জাতিক জলবায়ু আলোচনার দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ আর অপেক্ষা করতে পারে না। উন্নত দেশগুলোর সীমিত সহায়তা অভিযোজন ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে জাপানকে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের নির্ভরযোগ্য সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ ও জাপান পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রমে যৌথ সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত অংশীদারত্বের নতুন অধ্যায় হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন— পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান, জাপানের পক্ষ থেকে কার্বন সহযোগিতা কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেইতারো তসুজি, গবেষণা সংস্থা আইজেসের প্রতিনিধি কোয়াকুতসু, বাংলাদেশ–জাপান জলবায়ু ব্যবসা পরিষদের মহাসচিব মারিয়া হাওলাদার এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (জলবায়ু পরিবর্তন) মির্জা শওকত আলী।

কর্মশালায় সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, বেসরকারি খাতের নেতৃত্ব এবং জাপানি কোম্পানির প্রতিনিধিরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সবুজ প্রযুক্তি, জ্বালানি সাশ্রয় বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় করেন।

অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান এবং জাপানের প্রতিনিধিরা যৌথভাবে ‘অনুচ্ছেদ ৬ বিষয়ক বেসরকারি খাতের নির্দেশিকা’ প্রকাশ করেন। গবেষণা সংস্থা আইজেসের সহায়তায় প্রস্তুত এই নির্দেশিকা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিনিয়োগযোগ্য প্রশমন প্রকল্প চিহ্নিত করা, বিদেশি অংশীদার বেছে নেওয়া এবং ভবিষ্যৎ কার্বন বাজারে অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবে।