সিদ্ধিরগঞ্জ(নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি: ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে যানজট এখন নৃত্য সঙ্গী। দীর্ঘ যানজটে প্রতিদিনই চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। হাইওয়ে পুলিশের কাঁচপুর থানার ওসির আর্থিক বাণিজ্য ও উদাসিনতায় ট্রাফিক আইন মানছে না পরিবহন শ্রমিকরা। ফলে একদিকে যানজট অন্য দিকে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে যাত্রী ও পথচারীরা। অনেকই বরণ করছেন পঙ্গুত্ব।
পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আব্দুল কাদির জিলানী কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই মাসোহারার জন্য চাপ প্রয়োগ শুরু করেছেন। তানাহলে গাড়ি আটক ও মামলা দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। ফলে ইতোমধ্যে অনেক পরিবহন কর্তৃপক্ষ মাসোহারা দেওয়া শুরু করেছেন। তারা বলেন, দেশের পটপরিবর্তনের পর ভেঙে পরেছিল মহাসড়কের নিয়মশৃঙ্খলা। বন্ধ হয়ে যায় পুলিশের টোকেন বাণিজ্য। গত ৫ আগস্ট আব্দুল কাদির জিলানী ওসি হিসেবে যোগদান করার পর থেকে আবার তা চালু হচ্ছে। বহিরাগত শরীফকে নিজের দেহরক্ষী হিসেবে রেখে তাকে দিয়ে আদায় করাচ্ছে মাসোহারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গজারিয়া পরিবহন থেকে মাসে ১৫ হাজার, স্বদেশ ও দোয়েল পরিবহন থেকে ২০ হাজার, সোনারগাঁ পরিবহন থেকে ১৫ হাজার, লেগুনা থেকে ২০ হাজার, নাফ পরিবহন থেকে ১৫ হাজার, শিমরাইল পরিবহন থেকে ১০ হাজার, আসমানী পরিবহন ও কাঁচপুর গ্রীণ লাইন পরিবহনের ডিপো থেকে ২০ হাজার, পন্যবাহী সোকতারা ট্রান্সপোর্ট থেকে ২০ হাজার, মাটিবাহী ড্রাম ট্রাকের নিয়ন্ত্রক শহিদের কাছ থেকে ট্রাকপ্রতি ১০ হাজার, মোগড়াপাড়া পিক-আপ স্ট্যান্ড থেকে আক্তারের মাধ্যমে ১৫ হাজার, মদনপুরে নসিমন-করিমনের নিয়ন্ত্রক মনিরের কাছ থেকে ২০ হাজার, হাইওয়ের সড়কের পাশে চোরাই তেলের ৮টি দোকান থেকে ৪৮ হাজার টাকা ছাড়াও মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন সিএনজি ও পেস্ট্রেল পাম্প থেকেও আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন তিনি। পুরাতন থানায় জব্দকৃত দুশতাধিক আটোরিকশার মধ্যে প্রায় ১০০ রিকশা নিয়ম বহির্ভুতভাবে ভাঙ্গারী দোকানে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে ওসির বিরুদ্ধে। কাঁচপুর নয়াবাড়ীর উজ্জলের ভাঙ্গারী দোকানে রিকশাগুলো বিক্রি করেছে ওসির দেহরক্ষী শরীফের মাধ্যমে। রিকশা বিক্রিতে জড়িত নয় দাবি করে ওসি বলেন, রিকশা বিক্রি কে করেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ওসি বাসাভাড়া বাবদ সরকারি অর্থ পেলেও তিনি বাসাভাড়া না নিয়ে থানার চতুর্থ তলাটি দখল করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন।
সোনারগাঁও পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিমন হোসেন বলেন, হাইওয়ে পুলিশের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে গেছি। আগে দিতাম ১০ হাজার টাকা। এখন দিতে হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। তবু ওসি খুশি না। গজারিয়া পরিবহনের মোস্তফা বলেন, আমি দায়িত্বে থাকলেও ওসির পেমেন্ট কোম্পানি থেকে দেয়। স্বদেশ ও দোয়েল পরিবহনের ইমরান বলেন, পুলিশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই পরিবহন ব্যবসা করতে হয়।
জানতে চাইলে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদির জিলানী মাসোহারা আদায়ের অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে বলেন, অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ায় আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে।
হাইওয়ে পুলিশের, গাজীপুর রিজিওনের পুলিশ সুপার ড. আ.ক.ম আকতারুজ্জামান বাসুনিয়া বলেন, ওসির বিষয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। যদি কোন পরিবহন মালিক বা শ্রমিক লিখিত অভিযোগ করেন, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।