সিদ্ধিরগঞ্জে ট্রিপল খুন ৩ জনকে আসামি করে মামলা
প্রধান আসামি ইয়াসিনের ৫ দিনের রিমান্ড
সিদ্ধিরগঞ্জ(নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি:
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ট্রিপল খুনের ঘটনায় ৩ জনকে এজাহার নামীয় আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়েছে। নিহতের বোন মুনমুন আক্তার(৩২) বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে মামলাটি করেন। মামলার প্রধান আসামি গ্রেপ্তারকৃত ইয়াসিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমা- চেয়ে শনিবার(১২ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠায় পুলিশ। শুনানি শেষে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেনের আদালতে আসামি ইয়াসিনকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আসামিরা হলেন, নিহত লামিয়া আক্তারের স্বামী মো. ইয়াসিন (২৪), শ^শুর দুলাল মিয়া (৫০) ও ননাশ শিমু (২৭)। তারা মিজমিজি দক্ষিণপাড়া এলাকার বাসিন্দা। মামলার প্রধান আসামি ইয়াসিনকে ঘটনার দিনই গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এদিকে এ হত্যাকা-ের তদন্ত ও ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য শনিবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার (ক্রাইম) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় ঘটনাস্থলের অদূরের পুকুর থেকে একটি লাগেজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। লাগেজে নিহতদের ব্যবহৃত জামা কাপড় ছিল।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, লামিয়া আক্তারের(২২)সঙ্গে ইয়াসিনের বিয়ে হয় ৫ বছর আগে। বিয়ের পর থেকেই শ^শুর ও ননাশ লামিয়াকে মারধর করতো। স্বামী ইয়াসিন নেশাগ্রস্থ ও ভবঘুরে। ফলে তিনি স্ত্রী সন্তানের কোন ভরণ পোষন দিতেন না। এতে লামিয়ার সঙ্গে ইয়াছিনের ঝগড়া বিবেধ লেগেই থাকতো। এক পর্যায় বিরক্ত হয়ে স্বামীর সংসার ছেড়ে মিজমিজি পশ্চিমপাড়া পুকুর পাড় এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে আলাদা থাকেন লামিয়া। জীবীকার জন্য সিদ্ধিরগঞ্জ পুলস্থ মুজিব ফ্যাশন পোশাক কারখানায় হেলপারের চাকরি নেন। ছেলে আব্দুল্লাহকে(৪) দেখভাল করার জন্য বড় বোন স্বপ্না আক্তারকে (৩৫) নিজের ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন। ভালই চলছিল তাদের জীবন। কিন্তু লামিয়ার স্বামী ইয়াসিন প্রায়ই স্ত্রীর কাছে এসে টাকা চাইত। তাকে টাকা না দিলেই মারধর ও খুন করার হুমকি দিত। সর্বশেষ গত ৭ এপ্রিল দুপুর ১ টার দিকে বাদী ও তার স্বামী লামিয়ার ভাড়া বাসায় যায়। বোনদ্বয় ও ভাগিনাকে দেখে তিনি চলে আসেন। এর পর থেকে লামিয়ার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তার বাসা গিয়ে দরজা বন্ধ পাওয়ায় যায়। আত্মীয়স্বজনসহ বিভিন্ন স্থানে সন্ধান করেও লামিয়া, স্বপ্না ও আব্দুল্লাহকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১১ এপ্রিল পাশ^বর্তী আব্দুর কাদিরের বাড়ির সামনে ও জুবায়ের হোসেন লিকনের বাড়ির দেয়াল ঘেসে ড্রেনের পাশে ময়লার স্তুপের মধ্যে মানুষের হাত দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে ময়লার স্তুপ সরিয়ে মাটি খুঁড়ে তিনটি খ- বিখ- লাশ উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে বাদী সনাক্ত করেন লাশ তিনটি তার ২ বোন ও ভাগিনার।
মুনমুন আক্তার বলেন, ইয়াসিন ও অন্য আসামিরা পরিকল্পিতভাবে লামিয়াসহ তিন জনকে হত্যা করে লাশ খ- বিখ- করে মাটির নীচে পুঁতে রেখে গুম করার চেষ্টা করেছে। আমি আসামিদের সর্বোচ্চ শাশিÍ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তিন হত্যাকান্ডের ন্যায়বিচার চাই।
সিদ্ধিগঞ্জ থানা ওসি মোহাম্মদ শাহিনূর আলম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইয়াসিন হত্যাকা-ের কথা স্বীকার করেছে। প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও আরো কেউ জড়িত কিনা তা জানার জন্য তাকে ১০ দিনের রিমা- চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত ৫ দিনের রিমা- দিয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।