আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেন ও গাজার যুদ্ধ নিয়ে ইউরোপ ও পশ্চিমাদের দ্বৈত মানদণ্ড তাদের বৈশ্বিক অবস্থান দুর্বল করছে বলে সতর্ক করেছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। বলেন, ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের হামলার নিয়ে ইউরোপের প্রতিক্রিয়া একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়গুলোর একটি। তার মতে, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন ২১ শতকের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়গুলোর একটি।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকের আগে দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সানচেজ এসব মন্তব্য করেন।
সানচেজ বলেন, ‘এটি একটি ব্যর্থতা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে কিছু দেশ ইসরায়েলকে কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা নিয়ে বিভক্ত। কিন্তু আমার দৃষ্টিতে এটি গ্রহণযোগ্য নয়। ইউক্রেনের মতো অন্যান্য সংকটে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে চাইলে আমাদের এই অবস্থান থেকে বের হতে হবে।’ তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, ‘যুদ্ধের প্রকৃতি ভিন্ন হলেও বিশ্ব এখন ইইউ ও পশ্চিমা সমাজের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইছে: আপনারা ইউক্রেন ও গাজার ক্ষেত্রে কেন দ্বিমুখী অবস্থান নিচ্ছেন?’
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞাসহ আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তার ভাষ্য, ‘গাজায় আমরা যা প্রত্যক্ষ করছি, তা সম্ভবত ২১ শতকের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সবচেয়ে ভয়াবহ অধ্যায়। স্পেন ইইউ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ বিষয়ে খুবই সোচ্চার।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমরা অন্তত ইসরায়েলের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব স্থগিত করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছি।’
সাক্ষাৎকারে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করে সানচেজ বলেন, ট্রাম্প দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা এবং বৈশ্বিক সাহায্য কর্মসূচি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় অবদান কমানোকে ‘বড় ভুল’ বলে উল্লেখ করেন। তার মতে, ট্রাম্পের বিচ্ছিন্নতাবাদ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা সমাজের কারো জন্যই ইতিবাচক নয়। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য যদি নৈতিক ও ধারাবাহিকভাবে কাজ করে, তবে তাদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ।
বুধবার লন্ডনে সানচেজ ও স্টারমারের মধ্যে এক দশকের মধ্যে প্রথম বড় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে জিব্রাল্টারের ভবিষ্যৎ নিয়ে চুক্তি হওয়ায় দীর্ঘদিনের বিরোধের অবসান ঘটেছে, আর এর ফলেই এই বৈঠক সম্ভব হয়েছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান