নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ অবৈধভাবে শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের (ডিপিএইচই) বদলি, পদোন্নতি ও প্রকল্পে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে এসব অর্থ উপার্জন করেছেন তিনি। তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট, স্ত্রী, শাশুড়ি, দুই শ্যালক ও বড় ভাইয়ের ব্যাংক স্টেটমেন্ট বিশ্লেষণ করে ঠিকাদারদের সঙ্গে তার অস্বাভাবিক আর্থিক লেনদেনের ভয়াবহ তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া তার বিশ্বস্ত ঠিকাদারদের অ্যাকাউন্ট চেক করেও অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। নাসরুল্লাহ অবশ্য কাছে দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন।
অভিযোগ রয়েছে, ঘুষের টাকা দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট, চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকায় পাঁচ তলা বিলাস বহুল ভবন ও পূর্বাচলে ১০ কোটি টাকার প্লট কিনেছেন। এ ছাড়া কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে তার বড় ভাই মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর নামে ৫০ একর জমি এবং ৮০ লাখ টাকায় দুটি প্রিমিও গাড়িও কিনেছেন তিনি। একটি গাড়ি নিজে ব্যবহার করেন (ঢাকা মেট্রো-গ-২০-৮৫১৩) অন্যটি ব্যবহার করেন তার স্ত্রী সুরাইয়া সানজিদা চৌধুরী। দুর্নীতির টাকার বেশিরভাগই কানাডাতে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া কানাডাতে নিজ নামে বাড়ি ও সম্পদ করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে প্রায় শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক এই নির্বাহী প্রকৌশলী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুরে আট মাস এবং লক্ষ্মীপুরে এক বছর তিন মাস দায়িত্ব পালন শেষে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের উন্নয়ন সমন্বয়ক ও ডিপিএইচইর ঠিকাদার মো. কামাল হোসেনকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে কুমিল্লা জেলায় বদলি হন মো. নাসরুল্লাহ। বদলির পর কামালের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সখ্য গড়ে ওঠে তার। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কামাল ও সাবেক মন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ায় ডিপিএইচই কর্মকর্তাদের বদলি, পদোন্নতিসহ সবকিছুর নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন এই দুজন। হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশ ছেড়ে দুবাই পালিয়েছেন কামাল হোসেন। আর এখন কুমিল্লা ছেড়ে কক্সবাজার জেলায় বদলি হওয়ার জন্য তদবির শুরু করেছেন মো. নাসরুল্লাহ। কিন্তু কক্সবাজার জেলায় বদলি না দিয়ে তাকে ফেনীতে বদলি করতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ডিপিএইচই। এই বদলিকে প্রমোশন বদলি হিসেবে দেখছেন ডিপিএইচইয়ের কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, নাসরুল্লাহ বিগত সরকারের মন্ত্রী তাজুল ইসলামের বিশ্বস্ত লোক ছিলেন। এ কারণে ওই সময় তাকে এক দিনের নোটিসে কুমিল্লায় বদলি করে আনা হয়েছিল। কুমিল্লা তাজুল ইসলামের জেলা হওয়ায় সেখানের সব কাজে প্রভাব বিস্তার করতেন তার উন্নয়ন সহকারী মো. কামাল হোসেন। এমনকি তাদের প্রভাবের কাছে অসহায় ছিলেন প্রধান প্রকৌশলীরাও। ডিপিএইচইয়ের সাবেক প্রধান প্রকৌশলীদের অনেকের অনিয়মের হাতিয়ার এই নাসরুল্লাহ। তাই তাকে নিরাপত্তা দিতে না পারলে প্রধানরাও ফেঁসে যেতে পারেন। এ কারণে তাকে কুমিল্লা থেকে সরিয়ে তার বাড়ির কাছের জেলা ফেনীতে বদলি করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে মো. নাসরুল্লাহর মূল বেতন প্রায় ৪০ হাজার টাকা। অর্থাৎ সরকারি চাকরির সময় থেকে এ পর্যন্ত তার মোট বৈধ আয় প্রায় ২০ লাখ টাকা। কিন্তু কুমিল্লা জেলায় বদলির পর পাঁচ শতাধিক টেন্ডারের মাধ্যমে শতকোটি টাকার বেশি কমিশন বাণিজ্য করেন এই নির্বাহী প্রকৌশলী। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ঠিকাদারদের সঙ্গে নাসরুল্লাহর ঘুষ ও কমিশন বাণিজ্যের বেশ কয়েকটি ব্যাংক স্টেটমেন্ট আসে সময়ের আলোর হাতে। এতে দেখা যায়, গত ২০২২ সালের বিভিন্ন সময়ে তিনি নিজের ও শ্বশুরালয়ের লোকজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি টাকার ওপরে ঘুষ লেনদেন করেছেন।
যার কিছু চিত্র তুলে ধরা হলো : ২০২২ সালের ২৬ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রুদ্র কনস্ট্রাকশনের প্রিমিয়ার ব্যাংক, কুমিল্লা ব্রাঞ্চ (অ্যাকাউন্ট-০১৩৭১১১০০০০০৪২৮) থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাসরুল্লাহর নিজ অ্যাকাউন্টে (০২১১১১০০০৫৮০৯ ইউনিয়ন ব্যাংক, আগ্রাবাদ ব্রাঞ্চ, চট্টগ্রাম) ২ লাখ টাকা আরটিজিএসের মাধ্যমে ট্রান্সফর করা হয়। ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর তার শাশুড়ি মোসা. রেহানা আক্তার চৌধুরীর (০২১১১০০০৯৮৬১, ইউনিয়ন ব্যাংক, আগ্রাবাদ ব্রাঞ্চ) অ্যাকাউন্টে আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শম্পা এন্টারপ্রাইজের এনআরবিসি ব্যাংক কুমিল্লা ময়নামতি ব্রাঞ্চ (অ্যাকাউন্ট-০১৩৪৩৩৩৪৫৫) থেকে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আরটিজিএসের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।
২০২২ সালের ২৪ মার্চ তার স্ত্রী মোসা. সুরাইয়া সানজিদা চৌধুরীর (অ্যাকাউন্ট নম্বর: ০১৮০৩১০০৩২২৩৮) মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, জুবলি ব্রাঞ্চ, চট্টগ্রাম শাখায় আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শামীম ট্রেডার্সের দিদার ই আলমের ফরিদগঞ্জের এনআরবিসি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (৫০১৭৩১১০০০০৩৭১০) থেকে ২ লাখ ৫০ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে।
২০২২ সালের ১৯ মে মেসার্স শামীম ট্রেডার্সের দিদার ই আলমের এনআরবিসি ব্যাংক ফরিদগঞ্জের সাব ব্রাঞ্চের অ্যাকাউন্ট (৫০১৭৩১১০০০০৩৭১০) থেকে তার শ্যালক মো. শাহিনুর জামান চৌধুরীর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নিউ আদর কসমেটিকসের (অ্যাকাউন্ট- ১৫৮৩৩০০০৬১৬, ব্যাংক এশিয়া, চাক্তাই ব্রাঞ্চ) অ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে। একই তারিখে একই ব্রাঞ্চে মো. শাহিনুর জামান চৌধুরীর ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট (১৫৮৩৪০০০১০৪) দিদার ই আলমের ফরিদগঞ্জ এনআরবিসি ব্যাংক থেকে আরও ৫০ লাখ টাকা লেনদেন করা হয়।
২০২২ সালের ২৬ জুন নাসরুল্লাহর আরেক শ্যালক মইনুল আরেফিন চৌধুরীর (অ্যাকাউন্ট ০২১১১১০০১১৮২৮, ইউনিয়ন ব্যাংক, আগ্রাবাদ ব্রাঞ্চ) মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রুদ্র কনস্ট্রাকশনের অ্যাকাউন্ট থেকে আরও ৫ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে।
২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রুদ্র কনস্ট্রাকশনের প্রিমিয়ার ব্যাংক কুমিল্লা ব্রাঞ্চ থেকে (অ্যাকাউন্ট ০১৩৭১১১০০০০০৪২৮) তার বড় ভাই মো. শহিদুল্লাহর (১১৩১০০১২৬৩৭০৯, ন্যাশনাল ব্যাংক, বরুড়া ব্রাঞ্চ, কুমিল্লা) অ্যাকাউন্টে ১২ লাখ টাকা পাঠানো হয়। একই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর বড় ভাইয়ের অ্যাকাউন্টে আরও ২ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছিল মেসার্স রুদ্র কনস্ট্রাকশনে প্রিমিয়ার ব্যাংকে কুমিল্লা ব্রাঞ্চ থেকে। একই বছরের ১৬ মে মেসার্স রুদ্র কনস্ট্রাকশনের অ্যাকাউন্ট থেকে আরও ১ লাখ টাকা পাঠানো হয় নাসরুল্লাহর বড় ভাই শহিদুল্লাহর অ্যাকাউন্টে।
পরিবারের বাইরেও নিজস্ব ঠিকাদারের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে নাসরুল্লাহ বিরুদ্ধে। তার সময়ে সবচেয়ে বেশি কাজ ও অর্থনৈতিক লেনদেন হয়েছে মেসার্স রুদ্র কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে। এই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক মো, শাহ মজিবের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন সময় লেনদেন করেছেন। শাহ মজিবের অ্যাকাউন্টটে (০১৩৭১১১০০০০০৪২৮, প্রিমিয়ার ব্যাংক, কুমিল্লা ব্রাঞ্চ) ঘুষ নিয়ে পরে তিনি সেই টাকা ক্যাশ করেন এবং বিভিন্ন স্থানে পাঠান বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০২২ সালের ৩ জুলাই মাসে লক্ষ্মীপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সোহরাব ইসলামের এনআরবিসি ব্যাংক চন্দ্রগঞ্জ ব্রাঞ্চ, লক্ষ্মীপুর, (অ্যাকাউন্ট নং ৫০৬০৩৩৩০০০০০৫৭৮) থেকে মেসার্স রুদ্র কনস্ট্রাকশনের অ্যাকাউন্টে প্রায় ৯৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা লেনদেন করা হয়েছে। যা পরে নাসরুল্লাহ ক্যাশ তুলে তার শ্যালক ও শ্যালকের প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে জমা রাখেন বলে জানা যায়।
এ ছাড়া মো. আনিসুর রহমান, ইসলামী ব্যাংক, চন্দ্রগঞ্জ ব্রাঞ্চ, লক্ষ্মীপুর, অ্যাকাউন্ট নং ২০৫০৩৩৫০২০১৯১৩১১৪ মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ২৩ লাখ টাকা; মেসার্স রহমান এন্টারপ্রাইজ, ন্যাশনাল ব্যাংক, নারায়ণগঞ্জ ব্রাঞ্চ থেকে (অ্যাকাউন্ট নং ১০১০০০০৬৪২৯০৫) ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা; মেসার্স সোহরাব ইসলাম, এনআরবিসি ব্যাংক, চন্দ্রগঞ্জ ব্রাঞ্চ, লক্ষ্মীপুর, অ্যাকাউন্ট নং ৫০৬০৩৩৩০০০০০৫৭৮ থেকে ২০২২ সালের ৩ জুলাই ১০ লাখ টাকা; ৩ অক্টোবর প্রায় ৫ লাখ টাকা, ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তারিখে ৮ লাখ টাকা, ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ১০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সিমেক ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড, যমুনা ব্যাংক, মালিবাগ ব্রাঞ্চ (অ্যাকাউন্ট নং ১০০১০০১৩৮৯৬৫৭) থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১৭ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এই টাকা দিয়ে তিনি ঢাকায় ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ তুলে ধরে দুদক ও স্থানীয় সরকারের উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি। তাতে বলা হয়েছে নাসরুল্লার বাবা একজন কৃষক এবং মা গৃহিণী ছিলেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছাড়া বাকি দুই ভাই বেকার। তিনি নবম গ্রেডের কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও সাবেক মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে পঞ্চম গ্রেডে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে জনস্বাস্থ্যে চাকরি করছেন।
কুমিল্লা জেলার ২০২১-২২ অর্থবছরে পল্লী অঞ্চলে পানি সরবরাহ প্রকল্পের একটি কাজে (দরপত্র আইডি-৭০৮৬৪২) কার্যাদেশ প্রদানের চার দিনের মাথায় কোনোরূপ কাজ সম্পাদন না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রুদ্র কনস্ট্রাকশনের নামে চূড়ান্ত বিল প্রদান করে সরকারের সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে ওই প্রকল্পের আওতায় আরও চারটি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করা হয় এবং সেগুলো থেকে সিএস বাবদ তিনি নিজ, প্রকল্প পরিচালক, প্রধান প্রকৌশলী, সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে ১০ পার্সেন্ট অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
এ ছাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর কুমিল্লা জেলায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পে প্রায় ৫ হাজার নলকূপ বরাদ্দ হয়েছে। ওই বরাদ্দের প্রেক্ষিতে ৩১টি প্যাকেজ দরপত্র আহ্বান করা হয়। এসব দরপত্রের ওপেনিং শিটে দেখা যায়, মেসার্স কামাল এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ অফিসিয়াল প্রাক্কলন প্রদান করে পয়সাসহ হিসাব করে হুবহু ১০ পার্সেন্ট লেসে (নিম্ন দরে) প্রদান করিয়ে ২৫টি কাজ নিম্ন দরদাতা হিসেবে পাইয়ে দেন। জানা যায় তিনি ঠিকাদারকে টাকার বিনিময়ে প্রাক্কলন দিয়েছেন। তা ছাড়াও ওই ঠিকাদারের ২৫টি কাজের মধ্যে ১৬টিতে (৫০ কোটি টাকার) পাশ করে নোয়া (নটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড) দেওয়া হয়েছে। কামাল এন্টারপ্রাইজের নামের কাজগুলো নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাসরুল্লাহ ওয়ার্ক অর্ডারের চার পার্সেন্ট কমিশনে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করেছেন।
কুমিল্লা জেলায় জানুয়ারি ২০২২ সালে সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পে ১৭টি রুরাল পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিমের দরপত্র করা হয়েছে। এই কাজের জন্য ঠিকাদারের কাছ থেকে ১০ পার্সেন্ট (১.৫০ কোটি) টাকার বিনিময়ে ৫টি প্যাকেজে ১৫ কোটি টাকার ১০ পার্সেন্ট এ্যভাবে (বাড়তি) কার্যাদেশ প্রদান করেন। এ ছাড়া ২টি প্যাকেজে ৬ কোটি টাকার ১০ পার্সেন্ট এ্যভাবে কার্যাদেশ প্রদান করেন। কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম, কাজের মূল রেট বিক্রি, বদলি, পদোন্নতি ও কমিশন বাণিজ্যেরও বিস্তারিত অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ বলেন, এরা কেউ আমার ঠিকাদার না। এগুলো আমার কোনো বিষয় না, আমার জানারও বিষয় না। যে টাকা দিয়েছে আর যাকে দিয়েছে তাকে জিজ্ঞাসা করেন। এগুলো দুই-আড়াই বছর আগের তথ্য। দুদকসহ বিভিন্ন জায়গায় দেওয়া হয়েছে। এসব নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে না।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রুদ্র কনস্ট্রাকশনের অ্যাকাউন্ট থেকে তার নিজ অ্যাকাউন্টে টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, আমি ওমরাহ করতে গেছিলাম। তখন অফিস থেকে আমার অ্যাকাউন্টে একটা টাকা পাঠাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু টাকা পাঠাতে পারিনি। তাই তার (রুদ্র কনস্ট্রাকশন) অ্যাকাউন্ট থেকে আমার অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছিল। টাকা পাঠানোর চার অ্যাকাউন্টের মধ্যে মোসা. রেহানা আক্তার চৌধুরীকে শাশুড়ি ও মোসা. সুরাইয়া সানজিদা চৌধুরীকে স্ত্রী বলে স্বীকার করলেও মো. শাহিনুর জামান চৌধুরীর ও তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আদর কসমেটিকস এবং মইনুল আরেফিন চৌধুরীকে তিনি চেনেন না বলে জানান।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ জানান, কাজের মাধ্যমে কমিশন বাণিজ্য করার কোনো সুযোগ নেই। আর এই বিষয়ে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব। যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তা হলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।